শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা, আর এই পেশায় যুক্ত হওয়ার প্রথম ধাপ হলো শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা। যারা ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ২০২৫-এ অংশ নিতে চলেছেন বা ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের জন্য এই পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সফলতার জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি আর সিলেবাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা। এই ব্লগে আমরা ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস, মানবন্টন এবং কার্যকরী প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কেন ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০২৫ এত গুরুত্বপূর্ণ?
১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০২৫ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার প্রাথমিক ধাপ। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায় না। তাই প্রথম ধাপেই সফল হওয়া জরুরি। এবার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (NTRCA) একই দিনে স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়ের পরীক্ষা আয়োজন করবে, যা প্রার্থীদের প্রস্তুতিকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে।
১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি সিলেবাস ও মানবন্টন ২০২৫
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ৪০% নম্বর পেলেই পাশ হিসেবে ধরা হয়। তবে ভালো ফলাফলের জন্য আরও বেশি নম্বরের লক্ষ্য রাখা উচিত। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে এবং সময় থাকে ১ ঘণ্টা। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা যায়।
পরীক্ষার বিষয়গুলো হলো:
- বাংলা: ২৫ নম্বর
- ইংরেজি: ২৫ নম্বর
- গণিত: ২৫ নম্বর
- সাধারণ জ্ঞান: ২৫ নম্বর
স্কুল পর্যায় ও কলেজ পর্যায়ের সিলেবাসের বিস্তারিত
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সিলেবাস মূলত তিনটি পর্যায়কে কেন্দ্র করে নির্ধারিত:
১. স্কুল পর্যায় (নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক) ২. কলেজ পর্যায় (উচ্চমাধ্যমিক ও কলেজ) ৩. মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান
প্রত্যেকটি পর্যায়ের জন্য সিলেবাসের বিষয়বস্তু প্রায় একই হলেও প্রশ্নের ধরন ও গভীরতা ভিন্ন হতে পারে।
১. বাংলা (২৫ নম্বর)
বাংলা অংশে ভাষা ও সাহিত্যের ওপর জোর দেওয়া হয়। এখানে ভালো করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দখল রাখা আবশ্যক:
- ভাষারীতি ও বিরামচিহ্নের ব্যবহার: বাক্য গঠনে ভাষার সঠিক প্রয়োগ এবং কোথায় কোন বিরামচিহ্ন বসবে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা।
- বাগধারা ও বাগবিধি: বিভিন্ন বাগধারার অর্থ ও বাক্যে সঠিক প্রয়োগ।
- শব্দ পরিবর্তন: লিঙ্গ পরিবর্তন, বচন পরিবর্তন, পুরুষ পরিবর্তন, কাল পরিবর্তন ইত্যাদি।
- অনুবাদ: বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদে দক্ষতা।
- সমাস ও সমার্থক/বিপরীতার্থক শব্দ: সমাস নির্ণয়, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দের ব্যবহার।
- ধ্বনি, বর্ণ, শব্দ, বাক্য: ব্যাকরণের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা।
এসব বিষয়ে ভালো করতে হলে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বই এবং বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম পড়া জরুরি।
২. ইংরেজি (২৫ নম্বর)
ইংরেজি অংশে তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক প্রয়োগের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে যেসব বিষয়ে প্রশ্ন আসে:
- Completing sentences: অসম্পূর্ণ বাক্য পূরণ করা।
- Translation from Bengali to English: বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ।
- Synonyms and Antonyms: সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ।
- Idioms and phrases: বাগধারা ও ফ্রেজের ব্যবহার।
- Sentence transformation: এক ধরনের বাক্যকে অন্য ধরনে পরিবর্তন করা (যেমন: Simple to Complex, Affirmative to Negative)।
- Parts of Speech: Noun, Pronoun, Adjective, Verb, Adverb, Preposition, Conjunction, Interjection-এর সঠিক ব্যবহার।
- Right form of verbs, Tense: ক্রিয়ার সঠিক রূপ ও কাল।
- Voice, Narration: বাচ্য ও উক্তি পরিবর্তন।
নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়া, ব্যাকরণ অনুশীলন করা এবং ভোকাবুলারি শেখা এই অংশে ভালো করার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
৩. গণিত (২৫ নম্বর)
গণিত অংশে পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি থেকে প্রশ্ন আসে। এখানে ভালো করার জন্য সূত্র প্রয়োগ ও দ্রুত সমাধানের কৌশল জানা জরুরি:
- পাটিগণিত: গড়, ল.সা.গু, গ.সা.গু, শতকরা, সুদ-কষা, লাভ-ক্ষতি, অনুপাত-সমানুপাত।
- বীজগণিত: উৎপাদক, বর্গ ও ঘন সংক্রান্ত সূত্রাবলি, গসাগু, সূচক ও লগারিদম।
- জ্যামিতি: রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও বৃত্তের মৌলিক ধারণা, ক্ষেত্রফল ও পরিসীমা নির্ণয়।
গণিতে ভালো করার জন্য নিয়মিত অনুশীলন এবং গণিতের সূত্রগুলো মুখস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৪. সাধারণ জ্ঞান (২৫ নম্বর)
সাধারণ জ্ঞান অংশে দেশ ও বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী এবং মৌলিক বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন আসে:
- বাংলাদেশ বিষয়াবলি: বাংলাদেশের ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, সংবিধান, সরকার ব্যবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিত্ব।
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও সংগঠন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিভিন্ন দেশের রাজধানী ও মুদ্রা।
- বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ: দৈনন্দিন বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবেশ বিজ্ঞান।
- সাম্প্রতিক ঘটনাবলী: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রতিক ঘটনা।
সাধারণ জ্ঞানের জন্য নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া, সাধারণ জ্ঞানের বই ও মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স দেখা উচিত।
১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির কিছু কার্যকরী টিপস
প্রথমবারেই নিবন্ধন পরীক্ষায় সফল হতে হলে প্রয়োজন একটি গোছানো ও সুপরিকল্পিত প্রস্তুতি। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো:
১. সিলেবাস ভালোভাবে পড়ুন: প্রস্তুতির প্রথম ধাপই হলো সিলেবাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা নেওয়া। কোন বিষয়ে কত নম্বর এবং কোন কোন টপিক থেকে প্রশ্ন আসে, তা জেনে নিন।
২. প্রতিদিনের রুটিন অনুসরণ করুন: প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় পড়াশোনার জন্য বরাদ্দ করুন। দুর্বল বিষয়গুলোতে বেশি সময় দিন এবং নিয়মিত অনুশীলন করুন।
৩. মক টেস্ট দিন: পরীক্ষার আগে মডেল টেস্ট বা মক টেস্ট দেওয়া খুবই জরুরি। এতে আপনার সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়বে এবং দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন।
৪. অনলাইনে প্রস্তুতি নিন: বিভিন্ন অনলাইন রিসোর্স, ভিডিও লেকচার এবং কুইজ ব্যবহার করুন। এতে আপনার প্রস্তুতি আরও সমৃদ্ধ হবে।
৫. পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্র সমাধান করুন: বিগত বছরের প্রশ্নপত্রগুলো সমাধান করলে প্রশ্নপত্রের ধরন ও প্যাটার্ন সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
৬. গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চিহ্নিত করুন: প্রতিটি বিষয়ের যে অংশগুলো থেকে বারবার প্রশ্ন আসে, সেগুলো চিহ্নিত করে আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন।
৭. রিভিশন: পরীক্ষা দেওয়ার আগে প্রতিটি বিষয় একাধিকবার রিভিশন দিন।
১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি সিলেবাস: কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
এখানে ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি সিলেবাস সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
প্রশ্ন ১: ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সিলেবাসের মধ্যে কোন কোন বিষয় রয়েছে? উত্তর: সিলেবাসের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয় রয়েছে।
প্রশ্ন ২: ২০২৫ সালের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য কিভাবে পরিকল্পনা করব? উত্তর: সঠিক সিলেবাস অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন, নিয়মিত মক টেস্ট দিন এবং অনলাইনে প্রস্তুতি নিন।
প্রশ্ন ৩: সাধারণ জ্ঞান বিষয়টি কীভাবে পড়ব? উত্তর: সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বেশি মনোযোগ দিন এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, ভূগোল, মুক্তিযুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বিজ্ঞান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শিখুন।
প্রশ্ন ৪: ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যোগ্যতা কি? উত্তর: যোগ্যতা স্তরভেদে ভিন্ন হয়। স্কুল পর্যায়ের জন্য এইচএসসি বা সমমান, স্কুল পর্যায়ের (২) জন্য স্নাতক, এবং কলেজ পর্যায়ের জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৫: শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ নম্বর কত? উত্তর: প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ নম্বর হলো ৪০%।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সফল হওয়া কঠিন কিছু নয়, যদি সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি থাকে। ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য উপরোক্ত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে পারেন। কঠোর অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাসই আপনাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। সকল শিক্ষক নিবন্ধন প্রত্যাশীদের জন্য রইল শুভকামনা।
